উদ্ভিদ সংবহন তন্ত্র: প্রকৃতির জীবনরেখা । plant circulation or vascular system
উদ্ভিদ সংবহন তন্ত্র: প্রকৃতির জীবনরেখা
প্রস্তাবনা
উদ্ভিদজগতের অস্তিত্বের মূল চাবিকাঠি হলো তার সংবহন তন্ত্র। মানবদেহের রক্তসংবহনের মতোই উদ্ভিদের জাইলেম (Xylem) ও ফ্লোয়েম (Phloem) জল, খনিজ ও পুষ্টি পরিবহনের মাধ্যমে টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেয়। এই ব্লগে আমরা উদ্ভিদের সংবহন প্রক্রিয়া, এর গঠন, কাজ, এবং প্রকৃতিতে এর গুরুত্ব নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করব।
১. সংবহন তন্ত্রের উপাদান: জাইলেম ও ফ্লোয়েম
উদ্ভিদের সংবহন তন্ত্র মূলত দুটি জটিল টিস্যু নিয়ে গঠিত:
জাইলেম (Xylem): জল ও খনিজ লবণ শোষণ করে মূল থেকে পাতায় পৌঁছে দেয়।
ফ্লোয়েম (Phloem): সালোকসংশ্লেষণে তৈরি শর্করা (গ্লুকোজ) পাতার থেকে অন্যান্য অংশে পরিবহন করে।
জাইলেমের গঠন ও কাজ
কোষের ধরন: ট্রাকেইড (Tracheids) ও ভেসেল এলিমেন্ট (Vessel Elements) নামক মৃত কোষ নলাকার কাঠামো তৈরি করে।
কার্যপদ্ধতি:
মূলের শোষণ: মূলরোম দ্বারা জল ও খনিজ শোষিত হয় (অস্মোসিস প্রক্রিয়ায়)।
জলের উর্ধ্বগতি: ট্রান্সপিরেশন (বাষ্পীভবন) ও কোহেশন-টেনশন তত্ত্বের মাধ্যমে জল পাতায় পৌঁছায়।
মেকানিক্যাল সাপোর্ট: কাঠিন্যতা প্রদান করে গাছকে সোজা রাখে।
ফ্লোয়েমের গঠন ও কাজ
কোষের ধরন: সিভ টিউব (Sieve Tubes) ও কমপ্যানিয়ন কোষ (Companion Cells) নামক জীবিত কোষ।
কার্যপদ্ধতি:
সোর্স টু সিঙ্ক: সালোকসংশ্লেষণের স্থান (সোর্স, যেমন পাতা) থেকে শর্করা সঞ্চয় বা বৃদ্ধির স্থানে (সিঙ্ক, যেমন ফল) পরিবহন।
প্রেশার ফ্লো হাইপোথেসিস: সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে শর্করা ফ্লোয়েমে প্রবেশ করে, জল অনুসরণ করে ও চাপ তৈরি হয়, যা শর্করা সরবরাহে সাহায্য করে।
আমাদের সাথে telegram এ যুক্ত হন -- https://t.me/railwaysntpcbengali
আমাদের সাথে whatsapp এ যুক্ত হন--- https://whatsapp.com/channel/0029Vb2bIFU8PgsE1peYGE2c
২. জল পরিবহনের প্রক্রিয়া: ট্রান্সপিরেশন ও কোহেশন-টেনশন
ট্রান্সপিরেশন: পাতার স্টোমাটা দিয়ে জল বাষ্প আকারে বের হওয়ার সময় জাইলেমে টান তৈরি হয়, যা জলকে উপরে টানে।
কোহেশন-টেনশন তত্ত্ব: জলের অণুগুলোর পারস্পরিক আকর্ষণ (কোহেশন) ও পাতার টানের সমন্বয়ে জল স্তম্ভ অবিচ্ছিন্ন থাকে।
মূলচাপ: রাতে ট্রান্সপিরেশন কমে গেলে মূলের কোষ জল নিঃসরণ করে জাইলেমে চাপ তৈরি করে (গটেশন ফেনোমেনন)।
৩. শর্করা পরিবহন: প্রেশার ফ্লো মডেল
লোডিং: পাতার কমপ্যানিয়ন কোষ ATP ব্যবহার করে সিভ টিউবে সুক্রোজ পাম্প করে।
অস্মোটিক প্রবাহ: সুক্রোজের উচ্চ ঘনত্বে জল জাইলেম থেকে ফ্লোয়েমে প্রবেশ করে, চাপ বাড়ায়।
আনলোডিং: সিঙ্ক কোষে সুক্রোজ ব্যবহৃত হলে জল ফিরে যায়, চাপ কমে।
৪. জাইলেম vs ফ্লোয়েম: পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য | জাইলেম | ফ্লোয়েম |
---|---|---|
কোষের অবস্থা | মৃত কোষ | জীবিত কোষ |
পরিবহন দিক | মূল থেকে পাতায় (একমুখী) | উভয় দিক (সোর্স টু সিঙ্ক) |
পরিবহন বস্তু | জল ও খনিজ | শর্করা, অ্যামিনো অ্যাসিড |
৫. পরিবেশগত প্রভাব
আলো: ট্রান্সপিরেশন বৃদ্ধি করে।
আর্দ্রতা: উচ্চ আর্দ্রতায় ট্রান্সপিরেশন কমে।
তাপমাত্রা: অত্যধিক তাপে স্টোমাটা বন্ধ হয়ে যায়।
৬. অভিযোজন: প্রকৃতির সমাধান
জেরোফাইটস (যেমন ক্যাকটাস): পুরু কিউটিকল, কাণ্ডে জল সঞ্চয়।
হাইড্রোফাইটস (যেমন পদ্ম): এয়ারেনকাইমা টিস্যু দ্বারা ভাসমানতা।
৭. মানবজীবনে প্রয়োগ
কৃষি: সেচ পদ্ধতি, গাছের গ্রাফটিং।
ঔষধি ব্যবহার: কুইনাইন, ডিজিটালিসের মতো যৌগ ফ্লোয়েমে সঞ্চিত।
৮. সমস্যা ও রোগব্যাধি
ডাচ এলম রোগ: ফাঙ্গাস দ্বারা জাইলেম ব্লকেজ।
এফিড: ফ্লোয়েমের রস চোষে, ভাইরাস ছড়ায়।
৯. উপসংহার
উদ্ভিদের সংবহন তন্ত্র প্রকৃতির এক অদৃশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং marvel। জল থেকে শুরু করে শর্করা পরিবহনের প্রতিটি ধাপ জীবনের জন্য অপরিহার্য। এই প্রক্রিয়া বোঝা জলবায়ু সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন দিশা দিতে পারে।
No comments