Header Ads

বিষয় লোকপাল

 দেশের প্রথম লোকপাল, অর্থাৎ দুর্নীতি-বিরোধী ন্যায়পাল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি পিনাকী চন্দ্র ঘোষ। ২০১৩ সালের লোকপাল ও লোকায়ুক্ত আইনে রাষ্ট্রপতির সম্মতিদানের পাঁচ বছর পর এই নাম চূড়ান্ত হল। একবার দেখে নেওয়া যাক বাকি লোকপালদের কীভাবে বাছাই করা হবে এবং তাঁরা কীভাবে কাজ করবেন  লোকপাল হিসেবে কাদের বাছাই করা হবে?

বিচারপতি পিনাকী চন্দ্র ঘোষকে নির্বাচন করেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটি। ওই একই কমিটি লোকপালের অন্য সদস্যদেরও বেছে নেবে। ২০১৩ সালের আইনানুসারে, লোকপালের এখজন চেয়ারপার্সন থাকবেন এবং থাকবেন অন্য সদস্যরা, যে সদস্য সংখ্যা ৮-এর বেশি হবে না। এঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশকে হতে হবে বিচারবিভাগের সদস্য। চেয়ারপার্সন এবং বাকি সদস্যদের বাছাই করা হবে একই পদ্ধতিতে। একটি সার্চ কমিটি সম্ভাব্য সদস্যদের নামের প্যানেল তৈরি করবে, সিলেকশন কমিটি সেই প্যানেলের নাম প্রস্তাব করবে, রাষ্ট্রপতি তাঁদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ করবেন।

আইনে বলা আছে, লোকপালের সদস্যদের অনধিক পঞ্চাশ শতাংশকে তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতি, ওবিসি, সংখ্যালঘু এবং মহিলা হতে হবে। সার্চ কমিটির সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম লাগু হবে। বেতন, ভাতা এবং চাকরির শর্তাদি লোকপাল চেয়ারপার্সনের ক্ষেত্রে হবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সমতুল, অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে তা হবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সমতুল।

দুর্নীতিবিরোধী ন্যায়পাল নির্বাচনের পর কী হবে?

লোকপাল বিভিন্ন বিভাগ গঠন করবে। এর একটি তদন্ত বিভাগ থাকবে, যারা মাথায় থাকবেন তদন্ত পরিচালক। কোনও সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ এলে, সে বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করবে ওই কমিটি। ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য থাকবে একটি প্রসিকিউশন উইং, যার মাথায় থাকবেন ডিরেক্টর অফ প্রসিকিউশন। কোনও সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে লোকপাল যদি কোনও অভিযোগ এনে থাকেন, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দিকটি দেখবে এই বিভাগ। লোকপালের অন্য সদস্যের নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে  সচিব, ডিরেক্টর অফ ইনকোয়ারি, ডিরেক্টর অফ প্রসিকিউশন এবং লোকপালের অন্য আধিকারিক ও কর্মীনিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

কোন ধরনের সরকারি কর্মীরা লোকপালের আওতায় আসবেন?

এই সরকারি কর্মীদের তালিকা বাস্তবিকই বিস্তৃত। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সাংসদ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের এ, বি, সি ও ডি পর্যায়ভুক্ত কর্মীদের জন্য নানা আইন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ দায়ের হয়, আইনানুসারে লোকপাল তার বিবিধ তদন্তের ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে কিছু শর্ত রয়েছে।


বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে লোকপাল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে পারবেন না। এই ক্ষেত্রগুলি হল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আইনশৃঙ্খলা, আভ্যন্তরীণ ও বহির্নিরাপত্তা, পরমাণুশক্তি বিষয়ক। এছা়ড়াও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ততক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত করা যাবে না যতক্ষণ না লোকপালের সব সদস্যরা তদন্ত শুরুর পক্ষে সহমত প্রকাশ করেন এবং অন্তত দুই তৃতীয়াংশ তাতে সম্মতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত (যদি হয়) তাহলে তা গোপনে হতে হবে এবং যদি লোকপাল মনে করে অভিযুক্তের পদ খারিজ করা উচিত, তাহলে তদন্তের নথি প্রকাশ করা যাবে না বা সে নথি কাউকে দেওয়া যাবে না।

সরকারি কর্মী হিসেবে এই আইনের আওতাভুক্ত হবেন লোকপালের নিজস্ব সদস্যরাও। চেয়ারপার্সন, সদস্য, আধিকারিক এবং লোকপালের অন্য কর্মীরাও এর আওতাভুক্ত হবেন, দেশে এবং বিদেশে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরাও এর আওতায় থাকবেন। এতে বলা হয়েছে, “এই আইন কোনও একজন কর্মী কেবলমাত্র তাঁর কাজের সময়কালের মধ্যেই এই আইনের আওতায় পড়বেন।“

তদন্ত কীভাবে হবে?

লোকপাল কোনও সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্ত করতে পারে। সে তদন্ত ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। আবার কোনও তদন্ত সংস্থাকে দিয়েও তদন্ত করানো যেতে পারে। প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে, লোকপাল কোনও সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করাতে পারে বা বিভাগীয় তদন্ত করাতে পারে। আবার অন্যকোনও যথাযথ সংস্থাকে দিয়েও তদন্ত চালাতে পারে। আবার এই গোটা কর্মপ্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘোষণাও করতে পারে।

আইনে উল্লিখিত লোকায়ুক্ত মানে কী?

কেন্দ্রে যা লোকপাল, রাজ্যে তাই লোকায়ুক্ত। সমস্ত রাজ্যেকেই লোকায়ুক্ত নিযুক্ত করতে বলা হয়েছে। লোকায়ুক্ত নিয়োগের ব্যাপারে সমস্ত অধিকার রাজ্যের হাতেই ন্যস্ত।

লোকায়ুক্ত নিয়োগের ব্যাপারে রাজ্যগুলির কাছে প্রত্যাশা কী?

কয়েকটি রাজ্যে ২০১৩ সালের আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই লোকায়ুক্ত কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ”দেখা যাচ্ছে, জম্মু-কাশ্মীর, মণিপুর, মোঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, পুডুচ্চেরি, তামিল নাড়ু, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা, পশ্চিম বঙ্গ এবং অরুণাচল প্রদেশ লোকায়ুক্ত/ উপ লোকায়ুক্ত নিয়োগ করেনি।” শীর্ষ আদালত সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্য় সচিবকে বলে, ”লোকায়ুক্ত/ উপ লোকায়ুক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনি, নিলে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে… লোকায়ুক্ত/ উপ লোকায়ুক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ না হওয়ার কারণ আদালতকে জানাতে হবে।
অরুণাচল প্রদেশ এবং মিজোরাম বিধানসভা লোকায়ুক্ত বিল ২০১৪ সালে পাশ করে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর তামিল নাড়ু, পশ্চিম বঙ্গ এবং পুদুচ্চেরি বিধানসভায় গত বছর জুলাই মাসে এই বিল পাস হয়।

No comments

Powered by Blogger.